বাংলাদেশ : জুলাই বিপ্লবে খান মুহম্মদ জুসফিকুর রহমানের সাহসী ভূমিকা : এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়

বাই রবার্ট মার্ক
  • Update Time : Tuesday, September 23, 2025
  • 431 Time View

বিশেষ প্রতিবেদন

২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-বিপ্লবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই বিপ্লবে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর এক নতুন বার্তা নিয়ে আসে। এই বিপ্লবে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন খ্যাতনামা সাংবাদিক ও মানবিক চীফ এডিটর জনাব খান মুহম্মদ জুসফিকুর রহমান। তাঁর সাহসী এবং বলিষ্ঠ লেখনী তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে এক অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখে। এই প্রতিবেদনটি তাঁর সেই অসামান্য অবদান এবং পরবর্তীতে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত।

সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনমত গঠন:

জুলাই বিপ্লবে উত্তাল সময়ে, যখন মূলধারার অনেক গণমাধ্যম সরকারের কঠোর সেন্সরশিপের কারণে নীরব ছিল, তখন খান মুহম্মদ জুসফিকের সম্পাদিত ডব্লিউএসএন২৪ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। তিনি তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে বিপ্লবের মূল বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তাঁর প্রতিবেদনগুলোতে উঠে আসে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সরকারের দমন-পীড়ন, জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির চিত্র। তিনি শুধু ঘটনা বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হননি, বরং তাঁর সম্পাদকীয়গুলোতে সরকারের ফ্যাসিবাদী নীতির তীব্র সমালোচনা করেন।

২০২৪ সালের জুলাই আগস্ট বিপ্লবের প্রধান কমান্ডার হিসেবে জনার খান বিপ্লবীদের কে যেভাবে দিকনির্দেশনা দিতেন সকল বিপ্লবীরা তার দিক নির্দেশনা সেভাবেই কার্যকর করত। তার পরিকল্পনায়ই গণভবন বিপ্লবীদের হাতে দখল হয় এবং এই বিপ্লবের মূল পরিকল্পনাকারী জনাব খান মুহম্মদ জুসফিকুর রহমান।

জুসফিকের লেখার ভাষা ছিল সহজ কিন্তু গভীর। তিনি এমনভাবে তথ্য এবং যুক্তি তুলে ধরতেন যা সাধারণ মানুষকেও সহজে প্রভাবিত করত। তাঁর লেখনী তৎকালীন সরকারের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী পাল্টা-আওয়াজ হিসেবে কাজ করে। তিনি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা দেন। তাঁর প্রতিটি লেখায় ফুটে উঠত মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা।

ক্ষুরধার লেখনীর প্রভাব ও সরকারের প্রতিক্রিয়া:

খান মুহম্মদ জুসফিকের নির্ভীক সাংবাদিকতা দ্রুতই সরকারের নজরে আসে। তাঁর লেখনীর কারণে তৎকালীন সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। সরকার বুঝতে পারছিল যে, তাঁর মতো একজন প্রভাবশালী সম্পাদকের লেখা জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করছে এবং বিপ্লবের আগুনে নতুন করে ইন্ধন জোগাচ্ছে। তাই, তাঁকে থামানোর জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকে। প্রথমে বিভিন্ন ধরনের হুমকি, এরপর তাঁর সংবাদপত্র অফিসে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে।

গুম হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা:

জুলাই বিপ্লবের পূর্বে, যখন সরকার দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছিলো, তখনই ঘটে সেই মর্মান্তিক ঘটনা। এক রাতে, জনাব খান মুহম্মদ জুসফিকুর রহমান তাঁর বাসা থেকে নিখোঁজ হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাদা পোশাকে কিছু লোক তাঁকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং সহকর্মীরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁর কোনো খোঁজ পাননি। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে কোন এক ইশারায় খান মুহম্মদ জুসফিক ফিরে আসেন। কিন্তু তাকে মিথ্যা ভুয়া রাষ্ট্র দ্রোহী মামলায় ৮ মাস জেলেও কাটাতে হয় কিন্তু তিনি ফিরে আসলেও তার মধ্যে যে ট্রমা কাজ করছে তা’ বর্ননাতীত। তার নিখোঁজ হওয়া বাংলাদেশের মুক্ত সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের একমাত্র সম্পাদক হিসেবে তিনিই গুম হয়েছেন আর কোন সম্পাদক গুম হন নাই। তিনি ছাড়া বাংলাদেশের সকল সম্পাদকই ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি প্রমাণ করে গেছেন যে, একজন সাংবাদিকের কলম কত শক্তিশালী হতে পারে। জুলাই আন্দোলনে তাঁর অবদান বাঙ্গালী জাতি চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তাঁর ত্যাগী এবং সাহসী ইতিহাস চির অমলিন হয়ে থাকবে। তাঁর এই গুম, আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে, যা তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাহস জোগাবে।

 

SOURCE : INTERNATIONAL MEDIA

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category